

চট্টগ্রাম চেম্বারে কারিগরি শিক্ষা বিষয়ক “হাই-লেভেল পলিসি ডায়লগ অন ফিউচার স্কিলস” অনুষ্ঠানে-কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা সচিব :
বাস্তবভিত্তিক শিক্ষা ও মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের বৃত্তিমূলক শিক্ষায় আনতে কাজ করছে সরকার
চট্টগ্রাম চেম্বারে কারিগরি শিক্ষা বিষয়ক “হাই-লেভেল পলিসি ডায়লগ অন ফিউচার স্কিলস” শীর্ষক ২৩ জুলাই রাতে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারস্থ কনফারেন্স হলে অনুষ্ঠিত হয়। আইএলও এর প্রোগ্রেস প্রকল্পের সহযোগিতায় অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি এবং মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব ড. কে এম কবিরুল ইসলাম। অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কারিগরি শিক্ষা বিভাগের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) শোয়েব আহমদ খান, কারিগরি এবং মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) শামসুর রহমান খান, বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মোহাম্মদ রুহুল আমিন, চট্টগ্রাম চেম্বার প্রশাসক মুহাম্মদ আনোয়ার পাশা, আইএলও চিফ টেকনিক্যাল এডভাইজর এবং অফিস ইনচার্জ পিটার বেলেন (গৎ. চবঃবৎ ইবষষবহ), প্রবীণ ব্যবসায়ী ও সংগঠক একরামুল করিম চৌধুরী, ডায়গনষ্টিক ওনার এসোসিয়েশন এর সভাপতি ডা: এ কে এম ফজলুল হক, উইম্যান চেম্বারের পরিচালক আমেনা শাহিন ও প্রাক্তন সহ-সভাপতি আইভি হাসান, লুব-রেফ এর এমডি মোহাম্মদ ইউসুফ, কনফিডেন্স সিমেন্ট’র এমডি জহির উদ্দিন আহমেদ, টি.কে. গ্রæপের পরিচালক জাফর আলম, র্যানকন এফসি লিমিটেড এর সিইও তানভীর শাহরিয়ার রিমন, বিপিজিএমইএ এর পরিচালক শহীদুল ইসলাম চৌধুরী, ম্যাফ সুজ এর নির্বাহী পরিচালক শাহাদাত উল্লাহ, জিপিএইচ ইস্পাত লিমিটেড এর উপদেষ্টা ওসমান গণি চৌধুরী ও বিএসআরএম গ্রæপের রবিউল হাসান। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কারিগরি এবং মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের যুগ্মসচিব (পরিকল্পনা) ফাতেমা জাহান, রিহ্যাব এর চট্টগ্রাম অঞ্চলের চেয়ারম্যান হাজী দেলোয়ার হোসেন, প্রান্তিক গ্রæপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী গোলাম সরোয়ার, আইএলও এর প্রোগ্রেস প্রজেক্টের প্রাইভেট সেক্টর এনজেগমেন্ট অফিসার ওয়াসফি তামিম উপস্থিত ছিলেন।
কারিগরি এবং মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব ড. কে এম কবিরুল ইসলাম বলেন-বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা গুরুত্ব অনুধাবন করে সম্প্রতি প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার তিনটি প্রকল্প অনুমোদন করেছে। তাছাড়া এই কারিগরি শিক্ষাকে কিভাবে যুগোপযোগী করে ইন্ডাষ্ট্রির চাহিদানুযায়ী দক্ষ শিক্ষার্থী গড়ে তোলা যায় সে পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। এই শিক্ষাকে আরও বাস্তবমুখী করতে এ ধরণের আয়োজন করা হয়েছে। তিনি বলেন-আগে কোরিয়ানরা কারিগরি শিক্ষার জন্য বাংলাদেশে আসত এখন উল্টো আমাদের এখন তাদের দেশে যেতে হচ্ছে। তিনি বলেন-দেশে প্রতিবছর ১২ লাখ গ্র্যাজুয়েট বের হচ্ছে। কিন্তু, চাকরি হচ্ছে ২ লাখের। আবার তাদের নেই কোন উন্নত প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা। কিন্তু, এই কারিগরি শিক্ষায় ইন্ডাষ্ট্রির সহযোগিতা পেলে তা হয়ে উঠবে দক্ষ কর্মী গড়ার প্রতিষ্ঠান। তিনি আরও বলেন-দেশে প্রায় ৮০ লাখ কাওমী মাদ্রাসা শিক্ষার্থী রয়েছে। তাদেরকে প্রযুক্তি ও কারিগরি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মূলধারার কর্মমুখী শিক্ষায় আনার লক্ষ্যে কাজ করছে মন্ত্রণালয়।
কারিগরি শিক্ষা বিভাগের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) শোয়েব আহমদ খান বলেন-সরকার কারিগরি শিক্ষাকে বাস্তবমুখী করার জন্য অতিরিক্ত বাজেট বরাদ্দ ও নতুন জনবল নিয়োগ দিচ্ছে। কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীন সকল প্রতিষ্ঠানকে বাস্তবমুখী কারিগরি শিক্ষা নিশ্চিতের জন্য ইন্ডাষ্ট্রির সাথে অধিক যোগাযোগের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
কারিগরি এবং মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) শামসুর রহমান খান বলেন-কারিগরি শিক্ষার্থীরা যদি ভাল প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্ন করে তাহলে তারা দ্রুত দক্ষ কর্মীতে পরিণত হবে। তাই তাদেরকে দক্ষ কর্মী হিসেবে গড়ে তুলতে কারখানা ও শিল্প মালিকদের মতামতের ভিত্তিতে কোর্স প্ল্যান করছি।
বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মোহাম্মদ রুহুল আমিন বলেন-প্রতিটি চাকরি পরীক্ষায় লক্ষ লক্ষ কর্মী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। অথচ কারিগরি সেক্টরে কর্মীর সংখ্যা কম হওয়ায় তাদের চাকরি দ্রুত হয়ে যায়। সাধারণ শিক্ষার্থীদের যে স্কিল গ্যাপ রয়েছে তা নিরসনে আমরা কাজ করছি।
চেম্বার প্রশাসক মুহাম্মদ আনোয়ার পাশা বলেন-দেশের শিক্ষা খাতের মোট বাজেটের মাত্র ৫% ব্যয় হয় কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা খাতে। যদিও নানা সীমাবদ্ধতা রয়েছে তারপরও সরকার আন্তরিকতার সাথে এই সেক্টরের উন্নয়ন ও বেসরকারি খাতকে সহায়তার জন্য কাজ করছে। তিনি আরও বলেন-বিশ্ব কর্মসংস্থানের চিত্র দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে-অটোমেশন, ডিজিটালাইজেশন এবং সাস্টেনিবিলিটি আজকের ব্যবসার ধরণকে আমূল বদলে দিচ্ছে। এই প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশে টিকে থাকতে হলে আমাদের প্রয়োজন একটি দক্ষ, অভিযোজ্য এবং ভবিষ্যতমুখী কর্মশক্তি। অথচ, টেকনিক্যাল এন্ড ভোকেশনাল এডুকেশন এন্ড ট্র্রেনিং প্রতিষ্ঠান ও সনদপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের বাস্তবভিত্তিক কম দক্ষতার মধ্যে বড় ফাঁক রয়ে গেছে। এই ব্যবধান কমিয়ে আনতে কর্মস্থলভিত্তিক প্রশিক্ষণ হতে পারে এক ‘গেম চেঞ্জার’। শিক্ষার্থীরা যখন বাস্তব ব্যবসায়িক/ইন্ডাষ্ট্রির পরিবেশে শিখে, তখন তারা শুধু দক্ষতাই অর্জন করে না বরং বাস্তব অভিজ্ঞতা লাভ করে এবং সর্বোপরি, তাদের চাকরিযোগ্যতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়। তিনি একাডেমিয়া ও ইন্ডাষ্ট্রির মধ্যে সমন্বয়ের জন্য চট্টগ্রাম চেম্বারের পক্ষ থেকে সব ধরণের সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেন।
আইএলও চিফ টেকনিক্যাল এডভাইজর এবং অফিস ইনচার্জ পিটার বেলেন বলেন-দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি ও ইন্ডাষ্ট্রি এবং একাডেমির মধ্যে সমন্বয় সাধনের জন্য আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা তিনটি বিষয়ের উপর জোর দিচ্ছে। তার মধ্যে ইন্ডাষ্ট্রির চাহিদানুযায়ী সিলেবাস ও কারিকুলাম প্রণয়ন, ইন্ডাষ্ট্রির মানদন্ড অনুযায়ী প্রশিক্ষক তৈরি এবং ইন্ডাষ্ট্রির এটাচমেন্টের মাধ্যমে দক্ষ জনবল তৈরি। ইন্ডাষ্ট্রি একাডেমি এবং সরকারের সাথে সমন্বয় করে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে চেম্বারের মত প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে আসার আহবান জানান তিনি। এ ব্যাপারে তিনি আইএলও প্রোগ্রেস প্রজেক্টের মাধ্যমে সর্বোচ্চ সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেন।
অন্যান্য বক্তারা বলেন-দীর্ঘদিন পরে হলেও সরকারের এ ধরণের উদ্যোগকে আমরা সাধুবাদ জানাচ্ছি। ইন্ডাষ্ট্রি তার চাহিদানুযায়ী কর্মী চায়। কিন্তু, প্রতিষ্ঠানগুলো সেই অনুযায়ী দক্ষ শিক্ষার্থী গড়ে তুলতে পারছে না। ফলে শিক্ষার সাথে শিল্পের বড় ব্যবধান রয়েছে। যারা যত বেশি কারিগরি দক্ষতা ও আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে যোগ্য হয় উঠবে তাদের তত বেশি উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পাবে। বক্তারা আরও বলেন-মুন্সীগঞ্জে ইদ্রিস আলী মাদবর পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটসহ আরও কয়েকটি প্রাইভেট টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটে এ ধরণের প্রশিক্ষণের সুযোগ রয়েছে। এজন্য ব্যবসায়ী এবং কারখানা মালিকদেরও সিলেবাস ও কারিকুলাম প্রণয়নে সম্পৃক্ত করতে হবে। এক্ষেত্রে ইন্ডাষ্ট্রি এবং একাডেমির মধ্যে সমন্বয় সাধনের জন্য চট্টগ্রাম চেম্বারকে সম্পৃক্ত করার আহবান জানান বক্তারা।



