আয়কর (Income Tax)

1. Income Tax বা আয়কর কি?

আয়কর অর্থ আয়কর আইনের অধীন আরোপযোগ্য বা পরিশোধযোগ্য যেকোনো প্রকারের কর বা সারচার্জ।

2. আয়কর কীভাবে পরিশোধ করতে হবে?

এ-চালান (A-Chalan) এর মাধ্যমে কর পরিশোধ করতে হবে। একজন করদাতা যে কর অঞ্চলের অধীন সে কর অঞ্চলের জন্য নির্ধারিত কোডে করদাতাকে এ-চালান (A-Chalan) এর মাধ্যমে কর পরিশোধ করতে হবে। এছাড়াও প্রযোজ্য ক্ষেত্রে করদাতাকে আইনানুযায়ী উৎসে কর পরিশোধ করতে হবে।

3. কোন ব্যক্তি আয়কর প্রদানের জন্য উপযুক্ত?

আয়কর আইন, ২০২৩ অনুসারে প্রত্যেক স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতা (অনিবাসী বাংলাদেশিসহ), হিন্দু যৌথ পরিবার, অংশীদারী ফার্ম এর ক্ষেত্রে আয়ের সীমা ৩,৫০,০০০ টাকার উপরে হলে আয়কর প্রদান এর জন্য উপযুক্ত বলে বিবেচিত হবেন। তবে:

  • মহিলা করদাতা এবং ৬৫ বৎসর বা তদূর্ধ্ব বয়সের করদাতার আয় ৪,০০,০০০ টাকা এর উপরে হলে তিনি কর প্রদানে উপযুক্ত হবেন;
  • তৃতীয় লিঙ্গের করদাতা এবং প্রতিবন্ধী স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতার আয় ৪,৭৫,০০০ টাকা এর উপরে হলে তিনি কর প্রদানে উপযুক্ত হবেন;
  • গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা করদাতার আয় ৫,০০,০০০ টাকা এর উপরে হলে তিনি কর প্রদানে উপযুক্ত হবেন;
  • কোনো প্রতিবন্ধী ব্যক্তির পিতামাতা বা আইনানুগ অভিভাবকের প্রত্যেক সন্তান/পোষ্যের জন্য করমুক্ত আয়ের সীমা ৫০,০০০ টাকা অধিক হবে; প্রতিবন্ধী ব্যক্তির পিতা ও মাতা উভয়েই করদাতা হইলে যেকোনো একজন এই সুবিধা ভোগ করবেন।
4. আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪ এর আওতায় কি কি ধরণের কর আরোপ করা হয়?

আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪ এর আওতার দুই ধরনরে কর আরোপ করা হয়:

  1. ব্যক্তিগত আয় কর
  2. কর্পোরেট আয়কর
5. এলাকাভেদে ন্যূনতম আয়কর কি?

আয়কর আইন, ২০২৩ অনুসারে প্রত্যেক স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতা (অনিবাসী বাংলাদেশিসহ), হিন্দু যৌথ পরিবার, অংশীদারী ফার্ম এর ক্ষেত্রে আয়ের সীমা ৩,৫০,০০০ টাকার উপরে হলে আয়কর প্রদান করতে হবে। করমুক্ত আয়ের সীমা অতিক্রম করলে করদাতাকে এলাকাভেদে যে পরিমান কর পরিশোধ করতে হয় সেটাই ন্যূনতম কর। ন্যূনতম আয়করের পরিমাণ এলাকাভেদে নিম্নরূপ:

এলাকার বিবরণ ন্যূনতম কর হার
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এলাকায় অবস্থিত করদাতা ৫০০০
অন্য সিটিকর্পোরেশন এরিয়া এলাকায় অবস্থিত করদাতা ৪০০০
সিটিকর্পোরেশন এর বাইরে অন্য যেকোনো এরিয়া ৩০০০

করমুক্ত সীমার উর্ধ্বে আয় আছে এমন করদাতার প্রদেয় আয়করের পরিমাণ তার জন্য প্রযোজ্য ন্যূনতম আয়করের পরিমাণ অপেক্ষা কম হলে, অথবা বিনিয়োগজনিত কর রেয়াত বিবেচনার পর প্রদেয় আয়করের পরিমাণ প্রযোজ্য ন্যূনতম আয়করের কম, শূন্য বা ঋণাত্মক হলেও করদাতাকে তার জন্য প্রযোজ্য ন্যূনতম আয়কর পরিশোধ করতে হবে।

6. আয়কর নিবন্ধন কি?

আয়কর আইন ২০২৩ অনুসারে:

  • একজন করদাতার আয় যে কোনো স্থানেই অর্জিত হোক না কেন তিনি যেখানে অবস্থান করবেন তার সে অবস্থানের ভিত্তিতেই ন্যূনতম করের হার নির্ধারিত হবে।
  • কোনো করদাতা একই আয়বর্ষে একাধিক স্থানে অবস্থান করলে যে স্থানে তিনি সর্বাধিককাল অবস্থান করেছেন সে অবস্থানস্থলের জন্য প্রযোজ্য ন্যূনতম করহার তার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।
  • ব্যবসা আয়ের ক্ষেত্রে ব্যবসা পরিচালনার মুখ্য স্থানই ন্যূনতম করের জন্য একজন করদাতার অবস্থানস্থল হিসেবে বিবেচিত হবে।
  • একজন চাকরিজীবী করদাতা আয়বর্ষে একাধিক স্থানে কর্মরত থাকলে যে স্থানে তিনি অধিককাল কর্মরত ছিলেন ন্যূনতম করের জন্য সে স্থানই তার অবস্থানস্থল বলে বিবেচিত হবে।
7. আয়কর নিবন্ধন কি?

আয়কর আইন,২০২৩ এর ধারা ২৬১ অনুসারে কোনো ব্যক্তি নিজেকে করদাতা হিসেবে নিবন্ধন করতে পারবেন যদি তিনি:

  • করদাতা হন;
  • ধারা ১৬৬ এর অধীন রিটার্ন জমা দিতে বাধ্য হন;
  • ধারা ২৬৪ এর অধীন রিটার্ন দাখিলের প্রমাণ উপস্থাপন করিতে বাধ্য হন;
  • কর প্রদান করিতে অথবা রিটার্ন দাখিল করিতে ইচ্ছুক হন।

সেক্ষেত্রে ব্যক্তি অনলাইনে নিবন্ধন করতে পারেন যার বিপরীতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড করদাতাকে একটি করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) প্রদান করে। এই প্রক্রিয়াকেই আয়কর নিবন্ধন বলে।

8. রিটার্ন কি?

আয়কর কর্তৃপক্ষের নিকট একজন করদাতার বার্ষিক আয়, ব্যয় এবং সম্পদের তথ্যাবলী নির্ধারিত ফরমে উপস্থাপন করার মাধ্যম হচ্ছে রিটার্ন। আয়কর আইন অনুযায়ী স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতার রিটার্ন সকল প্রকার আয়ের বিবরণী, বাংলাদেশে এবং বাংলাদেশের বাহিরে অবস্থিত সকল প্রকার পরিসম্পদ ও দায়ের বিবরণী এবং, ক্ষেত্রমত, জীবনযাপন সংশ্লিষ্ট সকল প্রকার ব্যয়ের বিবরণী সংবলিত হবে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক নির্ধারিত ফরমে রিটার্ন দাখিল করতে হয়।

9. রিটার্ন কারা দাখিল করেন?

কারা রিটার্ন দাখিল করবেন তা দুই ভাগে চিহ্নিত করা যায়, যথা:-

    • যাদের করযোগ্য আয় রয়েছে; এবং
    • যাদেরকে আবশ্যিকভাবে রিটার্ন দাখিল করতে হবে।
10. রিটার্ন কোথায় দাখিল করতে হয়?

টিআইএন সনদে উল্লেখিত অধিক্ষেত্র বা সার্কেল অনুযায়ী রিটার্ন দাখিল করতে হবে। রিটার্ন দাখিলের সময় করদাতা বিদেশে অবস্থান করলে বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসেও রিটার্ন দাখিল করা যায়। তাছাড়া, https://etaxnbr.gov.bd/ ওয়েবসাইট ব্যবহার করে অনলাইনেও রিটার্ন দাখিল করার সুযোগ রয়েছে।

11. ই-টিআইএন কি?

ই-টিআইএন মানে ইলেকট্রনকি ট্যাক্স আইডেনটিফিকেশন নাম্বার, ইহা আয়কর নিবন্ধনের আধুনিক সংস্করণ। ইহা ১২ ডিজিটের ১টি নম্বর। একজন করদাতাকে সহজে, ঘরেবসে অনলাইনে নিবন্ধন পেতে এই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। www.incometax.gov.bd এই সাইট গেলে ই-টিআইএন নিবন্ধন নেওয়া যাবে।

12. আমি ই-টিআইএন এর জন্য কীভাবে আবেদন করতে পারি?

আপনি ই-টিআইএন এর জন্য www.incometax.gov.bd এই সাইটের মাধ্যমে আবেদন করতে পারেন এবং নিবন্ধন নিতে পাবেন।

13. ই-টিআইএন প্রাপ্তির জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট কি লাগে?

ধরনের উপর নির্ভর করবে টিআইএন সার্টিফিকেট পেতে কি কি তথ্য লাগবে নিম্নে ছক আকারে দেওয়া হলোঃ

ধরন প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট
Individual প্রাপ্ত বয়স্ক করদাতার নাম, বৈধ জাতীয় পরিচয়পত্র, নম্বর, জন্ম তারিখ (জাতীয় পরিচয় পত্র অনুযায়ী)
Individual অপ্রাপ্ত বয়স্ক করদাতার নাম, অভিবাবকের নাম, অভিবাবকের টিআইএন, করদাতার ছবি( সফট কপি পাসপোর্ট সাইজের)
বিদেশী, বাংলাদেশি, without NID পাসপোর্ট নম্বর, পাসপোর্ট ইস্যুর তারিখ, ভিসা নম্বর, ভিসা ইস্যুর তারিখ, করদাতার ছবি (সফট কপি, পাসপোর্ট সাইজ)
কোম্পনির নাম (নিবন্ধন অনুযায়ী) নিবন্ধন নম্বর ও তারিখ।
ফার্মে Registered ফার্মের নাম (নিবন্ধন অনুযায়ী), নিবন্ধন নম্বর ও তারিখ।
ফার্মে (Unregistered) ফার্মের পার্টনারদের টিআইএন নম্বর এবং তাদের নাম।
Other (AOP, HUF local Authority, AJP) Authorized person / কর্তা ব্যক্তির টিআইএন নম্বর
14. আমি আমার আয়কর অধীক্ষেত্র কোনটি তা কিভাবে বুঝব?

প্রত্যেক শ্রেণীর করদাতার আয়কর অধীক্ষেত্রে নির্ধারনের কিছু পদ্ধতি রয়েছে যেমন করদাতার কর্মস্থল, করদাতার নিয়োগকারী প্রতিষ্টান, চাকুরির/ব্যবসার ধরন, মূল আয়ের উৎস ইত্যাদির বিবেচনায় কর অধীক্ষেত্রে নির্বাচিত করা হয়।

বর্তমানে www.incometax.gov.bd ওয়েব সাইটে গিয়ে Jurisdiction Finder বাটনে ক্লিক করে প্রয়োজনিয় তত্ত্ব প্রদান করিলে ওয়েব সাইটি সয়ংক্রিয় ভাবে করদাতার আধিক্ষেত্র প্রদর্শন করিবে। এছাড়াও নতুন করদাতা অনলাইনে টিঅইএন আবেদন করিলে টিঅইএন সনদের সঙ্গে কর অঞ্চল ও কর সার্কেল উল্লেখ থাকবে। করদাতাকে স্বশরীরে অধীক্ষেত্র নির্ধারন বা সার্কেলে গিয়ে আবেদন করার প্রয়োজন নেই।

15. টিআইএন সনদ কি?

একজন করদাতা কর প্রদানের উদ্দেশ্যে কোন সার্কেলে আবেদন করিলে সংশ্লিষ্ট সার্কেল থেকে উপকর কমিশনার কর্তিক করদাতা সনাক্ত করতে যে সনদ প্রদান করা হয় তাকে টিআইএন সনদ বলে।

16. আয়কর সনদ কি?

করদাতা পূর্ববর্তী কর বর্ষের আয়কর রিটার্ন জমাদিলে কর সার্কেল কর্তিক যাচাই বাছাই ও মূল্যায়ন শেষে করদাতাকে সংশ্লিষ্ট সার্কেলের উপকর কমিশনার কর্তিক যে সনদ প্রদান করা হয় তাকে আয়কর সনদ বলে।

17. আয়কর আরোপযোগ্য সীমা কি?

তৃতীয় লিঙ্গের করদাতা, মহিলা করদাতা, ৬৫ বছর বা তদূর্দ্ধ বয়সের করদাতা, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি (person with disability) করদাতা এবং গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা করদাতার ক্ষেত্রে করমুক্ত আয়ের সীমা নিম্নরূপ:

  • মহিলা করদাতা এবং ৬৫ বছর বা তদূর্ধ বয়সের করদাতার ক্ষেত্রে ৪,০০,০০০ টাকা;
  • তৃতীয় লিঙ্গের করদাতা এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তি করদাতার ক্ষেত্রে ৪,৭৫,০০০ টাকা;
  • গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা করদাতার ক্ষেত্রে ৫,০০,০০০ টাকা।
18. আমি ঠিকানা কিভাবে পরিবর্তন করতে পারি?

আপনি www.incometax.gov.bd ওয়েব সাইট থেকে খুব সহজে ঠিকানা, মোবাইল নম্বও ও ইমেইল এড্রেস পরিবর্তন করতে পারবেন। উক্ত ওয়েব সাইট Login করে Change Contact মেনুতে ক্লিক করুন। স্ক্রিনে নতুন ফর্ম দেখতে পাবেন।প্রয়োজনীয় পরিবর্তন শেষে নিচে কেন তথ্য পরিবর্তন করেছেন তার কারণ “Update Reason” বক্সে লিখুন। অত:পর Save বাটনে ক্লিক করুন। আপনার পরিবর্তিত তথ্য ডাটাবেইজে সংরক্ষিত হয়ে যাবে।

19. আমার আয় আয়কর আরোপযোগ্য সীমার নিম্নে নেমে গেলে আমি কিভাবে আমার নিবন্ধন বাতিল করতে পারি?

আপনার আয় আয়কর আরোপ যোগ্য সীমার নিচে নেমে গেলে এবং যদি আপনার মনেহয় নিকট ভবিষ্যতে আয়সীমা ন্যুনতম আয়কর প্রদানের আওতায় আসবে না তাহলে আপনি সংশ্লিষ্ট সার্কেলের উপকর কমিশনার বরাবর টিআইএন বাতিলেন জন্য কারন ব্যাখ্যা করে আবেদন করতে পারেন। উপকর কমিশনার Inspection বা Hearing এর মাধ্যমে অথবা আবেদনের উপর ভিত্তি করে আপনার টিআইএন এর কার্যক্রম স্থগিত বা বাতিল করতে পারেন।

20. স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতা, হিন্দু অবিভক্ত পরিবার ও ফার্মের ২০২৪-২০২৫ করবর্ষের জন্য কর হার কত?

অর্থ আইন ২০২৪ এ বর্ণিত করহারের তফসিল-২ অনুযায়ী প্রত্যেক ব্যক্তির (বাংলাদেশী নন এরুপ অনিবাসী বাংলাদেশী স্বাভাবিক ব্যতীত), হিন্দু অবিভক্ত পরিবার ও ফার্মের মোট আয়ের উপর:

মোট আয় কর হার
প্রথম ৩,৫০,০০০/- টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের উপর শূণ্য
পরবর্তী ১,০০,০০০/-টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের উপর ৫%
পরবর্তী ৪,০০,০০০/- টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের উপর ১০%
পরবর্তী ৫,০০,০০০/- টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের উপর ১৫%
পরবর্তী ৫,০০,০০০/- টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের উপর ২০%
অবশিষ্ট মোট আয়ের উপর ২৫%

তবে, উল্লেখিত করহার করদাতার মর্যাদা নির্বিশেষে সিগারেট, বিড়ি, জর্দা, গুলসহ সকল প্রকার তামাকজাত পণ্য প্রস্তুতকারক করদাতার উক্ত ব্যবসা হতে অর্জিত আয়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না।

তাছাড়া, তৃতীয় লিঙ্গের করদাতা, মহিলা করদাতা, ৬৫ বছর বা তদূর্দ্ধ বয়সের করদাতা, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি (person with disability) করদাতা এবং গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা করদাতার ক্ষেত্রে করমুক্ত আয়ের সীমা নিম্নরূপ:

  • মহিলা করদাতা এবং ৬৫ বছর বা তদূর্ধ বয়সের করদাতার ক্ষেত্রে ৪,০০,০০০ টাকা;
  • তৃতীয় লিঙ্গের করদাতা এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তি করদাতার ক্ষেত্রে ৪,৭৫,০০০ টাকা;
  • গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা করদাতার ক্ষেত্রে ৫,০০,০০০ টাকা।

করমুক্ত সীমা নির্ধারণের ক্ষেত্রে, কোনো প্রতিবন্ধী ব্যক্তির পিতামাতা বা আইনানুগ অভিভাবকের প্রত্যেক প্রতিবন্ধী সন্তান/পোষ্যের জন্য করমুক্ত আয়ের সীমা ৫০,০০০টাকা বেশি হবে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তির পিতা ও মাতা উভয়েই করদাতা হলে যেকোনো একজন এ সুবিধা পাবেন।

21. স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতা, হিন্দু অবিভক্ত পরিবার ও ফার্মের ২০২৫-২০২৬ করবর্ষের জন্য কর হার কত?

অর্থ আইন ২০২৪ এ বর্ণিত করহারের তফসিল-৩ অনুযায়ী প্রত্যেক স্বাভাবিক ব্যক্তির (বাংলাদেশী নন এরুপ অনিবাসী বাংলাদেশী স্বাভাবিক ব্যতীত), হিন্দু অবিভক্ত পরিবার ও ফার্মের মোট আয়ের উপর:

মোট আয় কর হার
(ক) প্রথম ৩,৫০,০০০/- টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের উপর শূণ্য
(খ) পরবর্তী ১,০০,০০০/- টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের উপর ৫%
(গ) পরবর্তী ৪,০০,০০০/- টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের উপর ১০%
পরবর্তী ৫,০০,০০০/- টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের উপর ১৫%
(ঘ) পরবর্তী ৫,০০,০০০/- টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের উপর ২০%
(ঙ) পরবর্তী ২০,০০,০০০/- টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের উপর ২৫%
(চ) অবশিষ্ট মোট আয়ের উপর ৩০%

তবে, উল্লেখিত করহার করদাতার মর্যাদা নির্বিশেষে সিগারেট, বিড়ি, জর্দা, গুলসহ সকল প্রকার তামাকজাত পণ্য প্রস্তুতকারক করদাতার উক্ত ব্যবসা হতে অর্জিত আয়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না।

তাছাড়া, তৃতীয় লিঙ্গের করদাতা, মহিলা করদাতা, ৬৫ বছর বা তদূর্দ্ধ বয়সের করদাতা, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি (person with disability) করদাতা এবং গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা করদাতার ক্ষেত্রে করমুক্ত আয়ের সীমা নিম্নরূপ:

  • মহিলা করদাতা এবং ৬৫ বছর বা তদূর্ধ বয়সের করদাতার ক্ষেত্রে ৪,০০,০০০ টাকা;
  • তৃতীয় লিঙ্গের করদাতা এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তি করদাতার ক্ষেত্রে ৪,৭৫,০০০ টাকা;
  • গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা করদাতার ক্ষেত্রে ৫,০০,০০০ টাকা।

করমুক্ত সীমা নির্ধারণের ক্ষেত্রে, কোনো প্রতিবন্ধী ব্যক্তির পিতামাতা বা আইনানুগ অভিভাবকের প্রত্যেক প্রতিবন্ধী সন্তান/পোষ্যের জন্য করমুক্ত আয়ের সীমা ৫০,০০০ টাকা বেশি হবে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তির পিতা ও মাতা উভয়েই করদাতা হলে যেকোনো একজন এ সুবিধা পাবেন।

22. ট্রাস্ট, তহবিল, ব্যক্তিসংঘ, সমবায় সমিতি এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সহ কতিপয়ূ করদাতাদের জন্য ২০২৪-২০২৫ এবং ২০২৫-২০২৬ করবর্ষের করহার কত?
কোম্পানীর ধরণ কর হার
(ক) কোম্পানি এবং ব্যক্তি-সংঘ নহে, বাংলাদেশে অনিবাসী (অনিবাসী বাংলাদেশী ব্যতীত) এইরূপ অন্যান্য সকল করদাতার ক্ষেত্রে আয়ের উপর প্রযোজ্য কর উক্ত আয়ের ৩০%
(খ) কোম্পানি নহে, সিগারেট, বিড়ি, জর্দা, গুলসহ সকল প্রকার তামাকজাত পণ্য প্রস্তুতকারক এইরূপ করদাতার উক্ত ব্যবসায় হইতে অর্জিত আয়ের উপর প্রযোজ্য কর উক্ত আয়ের ৮৫%
(গ) কোম্পানি নহে, ট্রাস্ট, তহবিল, ব্যক্তিসংঘ এবং অন্যান্য করারোপযোগ্য সন্তার ক্ষেত্রে আয়ের উপর প্রযোজ্য কর উক্ত আয়ের ২৭.৫%

তবে শর্ত থাকে যে, বিবেচ্য আয়বর্ষে সকল প্রকার আয় ও প্রাপ্তি এবং প্রত্যেক একক লেনদেনে ৫ (পাঁচ) লক্ষ টাকার অধিক ও বার্ষিক সর্বমোট ৩৬ (ছত্রিশ) লক্ষ টাকার উর্ধ্বে সকল প্রকার ব্যয় ও বিনিয়োগ ব্যাংক ট্রান্সফারের মাধ্যমে সম্পন্ন করিলে উপরিউক্ত করহার উক্ত আয়ের ২৫% হইবে

(ঘ) সমবায় সমিতি আইন, ২০০১ (২০০১ সনের ৮৭ নং আইন) অনুযায়ী নিবন্ধিত সমবায় সমিতির ক্ষেত্রে আয়ের উপর প্রযোজ্য কর উক্ত আয়ের ২০%
(ঙ) বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ, বেসরকারি ডেন্টাল কলেজ, বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ বা কেবলমাত্র তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে শিক্ষাদানে নিয়োজিত বেসরকারি কলেজ এর উদ্ভূত আয়ের উপর প্রযোজ্য কর উক্ত আয়ের ১৫%
23. কোম্পানির জন্য ২০২৪-২০২৫ এবং ২০২৫-২০২৬ করবর্ষের করহার কত?
কোম্পানির বর্ণনা প্রযোজ্য কর হার শর্ত পরিপালনে করহার
পাবলিকলি ট্রেডেড কোম্পানি যাদের পরিশোধিত মুলধনের ১০% এর অধিক শেয়ার IPO(Initial Public Offering) এর মাধ্যমে হস্তান্তরিত হয়েছে। ২২.৫% ২০%
পাবলিকলি ট্রেডেড কোম্পানি যাদের পরিশোধিত মুলধনের ১০% বা ১০% এর কম শেয়ার IPO (Initial Public Offering) এর মাধ্যমে হস্তাম্বরিত হয়েছে ২৫% ২২.৫%
আয়কর আইন, ২০২৩ এ সংজ্ঞায়িত কোম্পানিসমূহের মধ্যে যারা পাবলিকলি ট্রেডেড নয় ২৭.৫% ২৫%
এক ব্যাক্তি কোম্পানি ২২.৫% ২০%
পাবলিকলি ট্রেডেড-ব্যাংক, বীমা ও ফাইন্যান্স কোম্পানি (মার্চেন্ট ব্যাংক ব্যতীত) ৩৭.৫% শর্ত প্রযোজ্য নয়
পাবলিকলি ট্রেডেড নয় এরুপ-ব্যাংক, বীমা বীমা ও ফাইন্যান্স কোম্পানি (মার্চেন্ট ব্যাংক ব্যতীত) ৪০% শর্ত প্রযোজ্য নয়
মার্চেন্ট ব্যাংক ৩৭.৫% শর্ত প্রযোজ্য নয়
সিগারেট, বিড়ি, জর্দা, গুলসহ সকল প্রকার তামাকজাত পণ্য প্রস্তুতকারী কোম্পানি ৪৫% শর্ত প্রযোজ্য নয়
পাবলিকলি ট্রেডেড মোবাইল ফোন অপারেটর ৪০% শর্ত প্রযোজ্য নয়
পাবলিকলি ট্রেডেড নয় এমন মোবাইল ফোন কোম্পানি ৪৫% শর্ত প্রযোজ্য নয়
শর্ত: বিবেচ্য আয়বর্ষে সকল প্রকার আয় ও প্রাপ্তি এবং প্রত্যেক একক লেনদেনে ৫ (পাঁচ) লক্ষ টাকার অধিক ও বার্ষিক সর্বমোট ৩৬ (ছত্রিশ) লক্ষ টাকার উর্ধ্বে সকল প্রকার ব্যয় ও বিনিয়োগ ব্যাংক ট্রান্সফারের মাধ্যমে সম্পন্ন করতে হবে।
24. টিডিএস কি?

ট্র্যাক্স ডিডাকসান এটসোর্স (উৎসে কর কর্তন)। করদাতার আয় থেকে উৎসে কর্তনের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত সত্তা কর্তিক উৎস কর কেটে রাখা হলে তা প্রচলিত রিটার্ন ফরম আইটি-১১গ এর ১৬ নং ক্রমিকে আয়বছরে উল্লেখ করতে হবে।
যেমন বেতন, ব্যাংক সুদ, গৃহ-সম্পত্তির বার্ষিক ভাড়া, পেশাগত ফি, ইত্যাদি থেকে উৎসে কেটে রাখা কর এখানে দেখাতে হবে। উৎস কেটে রাখা করের স্বপক্ষে কর কর্তনকারী কর্তৃপক্ষের সার্টিফিকেট রিটার্নের সাথে দাখিল করতে হবে।

25. আগাম আয়কর কি?

অগ্রিম আয়কর (এআইটি) এক ধরনের কর যা বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে আমদানি করা পণ্যের উপর অর্পিত হয়। অনিবন্ধিত আমদানিকারকদের করের আওতায় আনতে ২০০৭ এ এই কর ব্যবস্তা চালু করা হয়। উল্লেখ্য যে, Return জমা দেয়ার সময় এআইটি একই ভাবে withholding tax এর মতই গণ্য হবে।

26. আগাম আয়কর উৎসে কর্তনের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত সত্তা কারা?
  • সরকার বা সরকার কর্তৃক অনুমোদিত অন্য কোন কর্তৃপক্ষ
  • সরকার কর্তিক অনুমোদিত বাক্তি
  • কর্পোরেশন বা বডি
  • কোম্পানি
  • ব্যাংক, বীমা
  • কো অপারেটিভ ব্যাংক
  • এনজিও
  • কাস্টমস্ কমিশনার
  • বেন্ডরোল বিক্রির জন্য অনোমদিত বাক্তি
  • সিটি করপোরেশন বা পৌরসভা
27. কোন কোন সেবা হতে উৎসে আয়কর কর্তনযোগ্য? করের হার কত?
  • পেশাদারী পরিষেবা জন্য ফি
  • প্রযুক্তিগত সেবা জন্য ফি
  • কোন পারিশ্রমিক বা ফি বা কমিশন যে নামেই ডাকাহোক না কেন যা একজন পরিচালক কে প্রদান করা হয়েছে ,যা বেতন প্রকৃতিতে নয় এমন আয়
  • রয়েলিটি
  • কোন সমষ্টি আয় যা অধ্যায় 28 এর দফা (VA) এ উল্লিখিত যা অসম্পূর্ণ পেমেন্টর সঙ্গে সম্পর্কিত
28. কর প্রণোদনা কি?

কর হ্রাস যার মাধ্যমে কোন বাক্তি বা প্রতিষ্ঠান কে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখতে উত্সাহিত করবে।

29. কর নির্ধারণ কি?

কর নিধারন হচ্ছে মোট আয় ও কর পরিগনার একটি পদ্ধতি। আয়বছর শেষে করদাতা দুইটি প্রচলিত পদ্ধতির (সাধারন,সার্বজনীন স্বনির্ধারন) যে কোন একটি পদ্ধতিতে আয়কর দাখিল করতে পারেন।

30. করদিবস পরবর্তীকালেও স্বনির্ধারণী পদ্ধতিতে রিটার্ন দাখিল করা যাবে কি?

হ্যঁ। করদিবস পরবর্তীকালেও স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতাগণ স্বনির্ধারণী পদ্ধতিতে রিটার্ন দাখিল করবেন। অন্য কোনো পদ্ধতিতে রিটার্ন দাখিলের সুযোগ নেই।

31. রিটার্ন দাখিলের সাধারণ নিয়মাবলি সংক্রান্ত ধারা ১৬৯ এর সংশোধন

অর্থ আইন, ২০২৪ এর মাধ্যমে আয়কর আইন, ২০২৩ এর ধারা ১৬৯ এর উপ-ধারা (৫) এর দফা (ক) তে উল্লেখিত “স্বাভাবিক” শব্দটির পর “ব্যক্তি” শব্দটি সন্নিবেশ করা হয়েছে। এ সংশোধনীর ফলে করণিক ব্ুটি দূর হয়েছে এবং এই ধারার উদ্দেশ্য পরিষ্কার হয়েছে। অর্থাৎ ধারাটি কেবল স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতাদের জন্য প্রযোজ্য হবে তা সুস্পষ্ট হয়েছে।

32. স্বনির্ধারণী পদ্ধতিতে রিটার্ন দাখিল সংক্রান্ত ধারা ১৭০ এর প্রতিস্থাপন

অর্থ আইন, ২০২৪ এর মাধ্যমে আয়কর আইন, ২০২৩ এর ধারা ১৭০ প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। প্রতিস্থাপিত ধারা ১৭০ অনুযায়ী ধারা ১৬৬ এর অধীন রিটার্ন দাখিলের আইনানুগ বাধ্যবাধকতা রয়েছে এরূপ সকল ব্যক্তি ধারা ১৮০ এর অধীন স্বনির্ধারণী পদ্ধতিতে রিটার্ন দাখিল করবেন।

33. রিটার্ন দাখিলের সময় ও আয়কর পরিশোধ সংক্রান্ত ধারা ১৭১ এর প্রতিস্থাপন
  1. প্রতিস্থাপিত ধারা ১৭০ এর উপ-ধারা (১) অনুযায়ী প্রত্যেক করদাতাকে করদিবস বা তার পূর্বে রিটার্ন দাখিল করতে হবে।
  2. প্রতিস্থাপিত ধারা ১৭০ এর উপ-ধারা (২) অনুযায়ী করদিবস বা তার পূর্বে রিটার্ন দাখিলের ক্ষেত্রে ধারা ১৭৩ অনুযায়ী আয়কর পরিশোধপূর্বক রিটার্ন দাখিল করতে হবে।
  3. প্রতিস্থাপিত ধারা ১৭০ এর উপ-ধারা (৩) অনুযায়ী করদিবসের পরে রিটার্ন দাখিলের ক্ষেত্রে ধারা ১৭৪ অনুযায়ী আয়কর পরিশোধপূর্বক রিটার্ন দাখিল করতে হবে।
34. নুন্যতম কর প্রযোজ্য হয় এরূপ উৎসের আয় কি?
ধারা ন্যুনতম কর প্রযোজ্য হয় এরূপ আয়ের উৎস ধারা ন্যুনতম কর প্রযোজ্য হয় এরূপ আয়ের উৎস
৮৮ অংশগ্রহণ তহবিল, কল্যাণ তহবিল ও শ্রমিক ১১৭ লভ্যাংশ হইতে কর কর্তন কল্যাণ ফাউন্ডেশন তহবিলে প্রদত্ত অর্থ হইতে উৎসে কর্তন
৮৯ ঠিকাদার, সরবরাহকারী ইত্যাদিকে প্রদত্ত অর্থ ১১৮ লটারি, ইত্যাদি হতে প্রাপ্ত আয় হইতে কর
৯০ সেবার ক্ষেত্র পরিশোধ হইতে কর্তন ১২১ আমদানকারিকদের নিকট হইতে কর সংগ্রহ
৯১ স্পর্শাতীত সম্পত্তির জন্য পরিশোধিত অর্থ ১২১ জনশক্তি রপ্তানি হইতে কর সংগ্রহ
৯২ প্রচার মাধ্যমের বিজ্ঞাপন আয় হইতে কর কর্তন ১২২ ক্লিয়ারিং ও ফরওয়ার্ডিং এজেন্টদের নিকট
৯৪ কমিশন, ডিসকাউন্ট, ফি, ইত্যাদি হতে কর্তন বা উৎসে কর সংগ্রহ ১২৩ রপ্তানি আয় হইতে কর সংগ্রহ
৯৫ ট্রাভেল এজেন্টের নিকট হইতে কর সংগ্রহ ১২৪ কোন সেবা, রেভিনিউ শেয়ারিং, ইত্যাদি বাবদ বিদেশ হইতে প্রেরিত আয় হইতে কর কর্তন
১০০ বীমার কমিশনের অর্থ হইতে কর্তন ১২৫ সম্পত্তি হস্তান্তর, ইত্যাদি হইতে কর সংগ্রহ (চুড়ান্ত)
১০১ সাধারণ বীমা কোম্পানি জরিপকারীদের ফি, ইত্যাদি হইতে কর কর্তন ১২৬ রিয়েল এস্টেট বা ভূমি উন্নয়নকারীদের নিকট হইতে কর সংগ্রহ
১০২ সঞ্চয়ী আমানত ও স্থায়ী আমানত, ইত্যাদি হইতে কর কর্তন ১২৭ সরকারি স্ট্যাম্প, কোর্ট ফি, কাটিজ পেপার বাবদ পরিশোধিত কমিশন হইতে কর সংগ্রহ
১০৫ সঞ্চয় পত্রের মুনাফা হইতে কর কর্তন ১২৮ সম্পত্তির ইজারা হইতে কর সংগ্রহ
১০৬ সিকিউরিটিজের সুদ হইতে উৎসে কর কর্তন ১২৯ সিগারেট উৎপাদনকারীদের হইতে কর সংগ্রহ
১০৮ আন্তর্জাতিক ফোন কলের জন্য প্রাপ্ত অর্থ হইতে কর কর্তন ১৩২ কোন নিবাসীর জাহাজ ব্যবসা হইতে কর সংগ্রহ
১১০ কনভেনশন হল, কনফারেন্স সেন্টার, ইত্যাদি হইতে সেবাপ্রদানের জন্য কর কর্তন ১৩৩ প্রকাশ্য নিলামের বিক্রি হইতে কর সংগ্রহ
১১১ সম্পত্তি অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণ হইতে উৎসে কর কর্তন (চুড়ান্ত) ১৩৪ শেয়ার হস্তান্তর হইতে কর সংগ্রহ
১১২ নগদ রপ্তানি ভর্তুকির উপর উৎসে কর কর্তন(চুড়ান্ত) ১৩৫ সিকিউরিটিজ হস্তান্তর হইতে কর সংগ্রহ
১১৩ পরিবহন মাশুল ফরওয়ার্ড এজেন্সি কমিশন হইতে কর কর্তন ১৩৬ স্টক এক্সচেঞ্জের শেয়ারহোল্ডারদের শেয়ার স্থানান্তর হইতে কর সংগ্রহ
১১৪ বিদ্যুৎ ক্রয়ের বিপরীতে কর কর্তন ১৩৭ স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্যদের নিকট হইতে কর
১১৫ রিয়েল এস্টেট উন্নয়নকারীর (ডেভেলপার) নিকট হতে ভূমির মালিক কর্তৃক প্রাপ্ত আয় হইতে কর কর্তন (চুড়ান্ত) বাণিজ্যিকভাবে পরিচালিত মোটরযান হইতে কর সংগ্রহ
১১৬ বিদেশী ক্রেতার এজেন্টকে প্রদন্ত কমিশন বা পারিশ্রমিক হইতে কর কর্তন ১৩৯ নৌযান পরিচালনা হইতে কর সংগ্রহ
35. বাবার মৃতুর পর তার সম্পত্তি সন্তানের হিসাবে কিভাবে অর্ন্তভুক্ত করবে?

বাবার মৃত্যুর পর তার সম্পত্তি সন্তানদের মধ্যে উত্তরাধিকার সূত্রে বন্টন হবে। এ ক্ষেত্রে উক্ত সম্পত্তি উত্তরাধিকারী দের সম্পত্তি হিসাবে অন্তরভূ্ক্তি করিতে প্রমানপত্র হিসাবে বন্টন নামা দলিল বা দানপত্র দলিল বা অন্য কোন যৌক্তিক প্রমান পত্র থাকতে হবে। যেহেতু উক্ত সম্পত্তি উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত তাই এই সম্পদের উপর কোন কর ধার্য হইবে না। এ ক্ষেত্রে উপকর কমিশনার সর্বশেষ সিদ্ধান্ত গ্রহন করবেন।

36. বাবার মৃতুর পর তার টিআইএন বাতিল করার প্রয়োজনীয়তা আছে কি?

বাবার মৃত্যুর পর টিআইএন বাতিল করার প্রয়োজনীয়তা নির্ভর করে তার উত্তরাধিকারীদের উপর। যদি এমন কোন ব্যবসা বাবার নামে থাকে যা টিআইএন বাতিল করিলে ব্যবসা সংক্রান্ত সকল কাগজপত্র বাতিল করে নতুন করে করতে হয় কিংবা বড় ধরনের জটিলতা তৈরি হয় সে ক্ষেত্রে টিআইএন বাতিল না করে উত্তরাধিকারীরা প্রতিবছর বাৎসরিক রিটার্ন জমা দিয়ে Assessment করাতে পারবেন। আর যদি টিআইএন এর কোন প্রয়োজনীয়তা না থাকে তাহলে উত্তরাধিকারীরা উপকর কমিশনার বরাবর টিআইএন বাতিলের জন্য আবেদন করিতে পারেন। উপকর কমিশনার Inspection বা Hearing এর মাধ্যমে অথবা আবেদনের উপর ভিত্তি করে আপনার টিআইএন এর কার্যক্রম স্থগিত বা বাতিল করতে পারেন।

37. কোথায় আয়কর রিটার্ন জমা দিতে হয়?

প্রত্যেক শ্রেণীর করদাতার রির্টান দাখিলের জন্য আয়কর সার্কেল নির্দিষ্ট করা আছে। যেমন : A, B এবং C অক্ষরগুলো দিয়ে ঢাকা সিভিল জেলার অবস্থিত যে সকল বেসামরিক সরকার কর্মকতা/কর্মচারী ও পেনশনভুক্ত কর্মকর্তা/ কর্মচারীর নাম শুরু হয়েছে তাদেরকে কর অঞ্চল-৪, ঢাকা এর কর সার্কেল-৭১ এ রিটার্ন জমা দিতে হবে। পুরোনো করদাতারা তাদের বর্তমান সার্কেলে রিটার্ন জমা দেবেন। নতুন করদাতারা তাদের নাম, চাকুরীস্থল বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ঠিকানার ভিত্তিতে নির্ধারিত সার্কেলে ১২ সংখ্যার টিআইএন (e-TIN) উল্লেখ করে আয়কর রিটার্ন দাখিল করবেন। করদাতারা প্রয়োজনে কাছাকাছি আয়কর অফিস বা কর পরামর্শ কেন্দ্র থেকে আয়কর রিটার্ন দাখিল সংক্রান্ত সার্কেল অফিস সম্পর্কে জানতে পারবেন।

38. কোন সময়ে আয়কর রিটার্ন জমা দিতে হয়?

কোম্পানী ব্যতীত অন্যান্য সকল শ্রেণীর করদাতার ক্ষেত্রে প্রতি বছর ১ জুলাই থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর এই ৩ মাস সময়সীমার মধ্যে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হয়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রিটার্ন দাখিল করা সম্বব না হলে একজন করদাতা রিটার্ন দাখিলের সময়সীমা বাড়ানোর জন্য উপযুক্ত কারণ উল্লেখ করে উপ কর কমিশনারের কাছে সময়ের আবেদন করতে পারেন। সময় মঞ্জর হলে বর্ধিত সময়ের মধ্যে সাধারণ অথবা সার্বজনীন স্বনির্ধারণী পদ্ধতির আওতায় রিটার্ন দাখিল করা সম্ভব।

39. আমি নির্ধারিত সময়ে আয়কর রিটার্ন জমা না দিলে কী ধরণের ব্যবস্থা গৃহীত হবে?

নির্ধারিত সময়ে আয়কর রিটার্ন দাখিল না করিলে, সংশ্লিষ্ট করদাতাকে আত্মাপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেয়ার লক্ষ্যে আবশ্যিকভাবে ধারা-১৩০ মোতাবেক নোটিশ প্রদান সাপেক্ষে খেলাপী করদাতার সর্বশেষ আরোপিত আয়করের ১০% অথবা কমপক্ষে ১,০০০.০০ টাকা ও পরবর্তী প্রতি খেলাপী দিবসের জন্য ৫০.০০ টাকা, এ দু’টি মধ্যে যেটি বেশী, উপ-কর কমিশনার কর্তৃক তাহা জরিমানা আরোপ করিতে পারিবেন। শর্ত থাকে যে-

  • উপ ধারা-124(1) অনুযায়ী কোন নতুন ব্যক্তি-করদাতা, যাহার আয়ের উপর ইতোপূর্বে কখনো করারোপিত হয় নাই, তাঁহার ক্ষেত্রে আরোপযোগ্য মোট জরিমানা পরিমান ৫,০০০/- টকার বেশি হইবে না;
  • উপ ধারা -124(1) অনুযায়ী কোন নতুন ব্যক্তি-করদাতা, যাহার আয়ের উপর ইতোপূর্বে করারোপিত হইয়াছে এমন কোন পুরোনো ব্যক্তি-করদাতার ক্ষেত্রে এইরূপ জরিমানার পরিমাণ তাঁহার সর্বশেষ নিরূপিত আয়ের উপর ধার্যকৃত করের ৫০% বা ১,০০০/- টাকা, দু’টির মধ্যে যেটি বেশি, তাহা জরিমানার আরোপযোগ্য হইবে|
40. আয়কর রিটার্ন জমার প্রয়োজনীয়তা কি?

আয়কর কর্তৃপক্ষের নিকট করদাতার বার্ষিক আয়ের সংক্ষিপ্ত বিবরণ উপস্থাপন করার মাধ্যম হচ্ছে আয়কর রিটার্ন| আয়কর রিটার্ন জমার মাধ্যমে করদাতার বার্ষিক আয়-ব্যায় এবং সম্পদ ও দায়ের তথ্য দাখিল হয়| নির্ধারিত সময়ে আয়কর রিটার্ন দাখিল না করলে, সংশ্লিষ্ট করদাতাকে উপ-কর কমিশনার কর্তৃক জরিমানা আরোপের বিধান রয়েছে

41. রিটার্ন কোথায় দাখিল করতে হয়

টিআইএন সনদে উল্লেখিত অধিক্ষেত্র বা সার্কেল অনুযায়ী রিটার্ন দাখিল করতে হবে। রিটার্ন দাখিলের সময় করদাতা বিদেশে অবস্থান করলে বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসেও রিটার্ন দাখিল করা যায়। তাছাড়া, https://etaxnbr.gov.bd/ ওয়েবসাইট ব্যবহার করে অনলাইনেও রিটার্ন দাখিল করার সুযোগ রয়েছে।

42. রিটার্ন দাখিল না করলে কী হয়

যে সকল ক্ষেত্রে রিটার্ন দাখিলের প্রমাণ দাখিল বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, রিটার্ন দাখিল না করলে সে সকল সেবা হতে বঞ্চিত হতে হবে। যেমন- ক্ষেত্রমত, গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়া যাবে না কিংবা সংযোগ বিচ্ছিন্ন হবে, বেতন-ভাতাদি প্রাপ্তিতে অসুবিধা হবে ইত্যাদি। এছাড়াও নিম়নবর্ণিত বিষয়াদির মুখোমুখি হবার সম্ভাবনা রয়েছে, যেমন-

  • আয়কর আইনের ধারা ২৬৬ অনুযায়ী উপকর কমিশনার কর্তৃক আরোপিত জরিমানা পরিশোধ করা;
  • উপকর কমিশনার কর্তৃক একতরফাভাবে নির্ধারিত কর পরিশোধ করা।
43. আয়কর রিটার্ন জমা না দেয়ার শাস্তি কি?

৬৬। (১) যেইক্ষেত্রে কোনো ব্যক্তি যুক্তিসঙ্গত কারণ ব্যতীত, ধারা ১৬৬, ১৭২, ১৯১, ১৯৩ বা ২১২ এর অধীন কোনো ব্যক্তি রিটার্ন দাখিল করিতে ব্যর্থ হন, সেইক্ষেত্রে উপকর কমিশনার উক্ত ব্যক্তির সর্বশেষ নিরূপিত আয়ের উপর ধার্যকৃত করের ১০% (দশ শতাংশ) হারে জরিমানা আরোপ করিতে পারিবেন, যাহা ন্যূনতম ১ (এক) হাজার টাকা হইবে এবং ব্যর্থতা অব্যাহত থাকিলে ব্যর্থতা অব্যাহত থাকাকালীন প্রতিদিনের জন্য ৫০ (পঞ্চাশ) টাকা হারে অতিরিক্ত জরিমানা আরোপ করিতে পারিবেন: তবে শর্ত থাকে যে, উক্ত জরিমানার পরিমাণ নিম্নবর্ণিত অঙ্ক অতিক্রম করিবে না, যথা:-

  • ক) কোনো ব্যক্তি করদাতা, যাহার ইতঃপূর্বে কখনো কর নির্ধারণ হয় নাই, তাহার ক্ষেত্রে ৫ (পাঁচ) হাজার টাকা;
  • খ) কোনো ব্যক্তি করদাতা, যাহার ইতঃপূর্বে কর নির্ধারণ হইয়াছে, তাহার ক্ষেত্রে সর্বশেষ নিরূপিত আয়ের উপর প্রদেয় করের ৫০% (পঞ্চাশ শতাংশ) বা ১ (এক) হাজার টাকা, দু’টির মধ্যে যাহা অধিক।

(২) যেইক্ষেত্রে কোনো ব্যক্তি যুক্তিসঙ্গত কারণ ব্যতীত,

  • ক)ধারা ১৭৭ এর অধীন কোনো রিটার্ন, তথ্য দাখিল বা উপস্থাপন করিতে ব্যর্থ হইয়াছেন সেইক্ষেত্রে উপকর কমিশনার উক্ত ব্যক্তির উপর তাহার সর্বশেষ নিরূপিত আয়ের উপর ধার্যকৃত করের ১০% (দশ শতাংশ) হারে অথবা ৫ (পাঁচ) হাজার টাকা, দু’টির মধ্যে যাহা অধিক, সেই পরিমাণ জরিমানা আরোপ করিতে পারিবেন এবং ব্যর্থতা অব্যাহত থাকিলে, ব্যর্থতা অব্যাহত থাকাকালীন প্রতি মাসের জন্য অথবা তাহার ভগ্নাংশের জন্য ১ (এক) হাজার টাকা হারে অতিরিক্ত জরিমানা আরোপ করিতে পারিবেন;
  • খ) ধারা ১৪৫ এর অধীন কোনো সার্টিফিকেট প্রদান করিতে ব্যর্থ হইয়াছেন, সেইক্ষেত্রে উপকর কমিশনার উক্ত ব্যক্তির উপর ৫ (পাঁচ) হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা আরোপ করিতে পারিবেন এবং ব্যর্থতা অব্যাহত থাকিলে, ব্যর্থতা অব্যাহত থাকাকালীন প্রতি মাসের জন্য অথবা তাহার ভগ্নাংশের জন্য ১ (এক) হাজার টাকা হারে অতিরিক্ত জরিমানা আরোপ করিতে পারিবেন;
  • (গ) ধারা ২০০ এর আবশ্যকতা অনুযায়ী কোনো তথ্য দাখিল বা উপস্থাপনে ব্যর্থ হন, সেইক্ষেত্রে যে আয়কর কর্তৃপক্ষ ধারা ২০০ এর অধীন তথ্য চাহিয়াছে সেই কর্তৃপক্ষ উক্ত ব্যক্তির উপর ৫০ (পঞ্চাশ) হাজার টাকা জরিমানা আরোপ করিতে পারিবেন এবং ব্যর্থতা অব্যাহত থাকিলে, ব্যর্থতা অব্যাহত থাকাকালীন প্রতি দিনের জন্য ৫০০ (পাঁচশত) টাকা হারে অতিরিক্ত জরিমানা আরোপ করিতে পারিবেন।
44. স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য সারচার্জ কত?

যেকোন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিগণের গম্যতার ক্ষেত্রে দেশ বলবৎ আইনি বিধান অনুযায়ী উপযুক্ত ব্যবস্থা না রাখলে উক্ত প্রতিষ্ঠানের অর্জিত আয়ের উপর ২.৫% হারে সারচার্জ প্রদেয় হবে।

45. জাল /নকল (fake) নিরীক্ষা প্রতিবেদন দাখিলের শাস্তি কি?

যেইক্ষেত্রে এই আইনের অধীন কোনো কার্যক্রম চলাকালে, উপকর কমিশনার, অতিরিক্ত কর কমিশনার (আপিল), কমিশনার (আপিল) অথবা আপিল ট্রাইব্যুনাল সন্দেহাতীতভাবে এই মর্মে সন্তুষ্ট হন যে, করদাতা কর্তৃক কোনো আয়বর্ষের জন্য রিটার্নের সহিত বা পরবর্তী সময়ে দাখিলকৃত নিরীক্ষা প্রতিবেদনটি চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট কর্তৃক স্বাক্ষরিত নহে বা অসত্য হিসাবে বিশ্বাসযোগ্য, সেইক্ষেত্রে উক্ত কর্তৃপক্ষ বা, ক্ষেত্রমত, ট্রাইব্যুনাল উক্ত করদাতার উপর উক্ত আয়বর্ষের জন্য ১ (এক) লক্ষ টাকা জরিমানা আরোপ করিতে পারিবেন।